যুগের কথা প্রতিবেদক : সিরাজগঞ্জে ধর্ষণের অপরাধ থেকে ধর্ষণকারীকে রক্ষা করাতে দুটি বাল্যবিবাহ পড়ালেন সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ (মজিদ ডাকাত)।
গত মঙ্গলবার রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের ৪নং ওর্য়াড আড়িয়ামোহন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বুধবার (১ মে) সকালে সরজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, আড়িয়ামোহন গ্রামে আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সুমন মিয়া ও একই গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে আসাদুল ইসলাম দুইজন বিবাহিত।
এই দুইজন মিলে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্কুল পড়ুয়া মেয়ের সাথে বিভিন্ন কৌশলে প্রেমের সর্ম্পক তৈরী করে বিয়ের পোলভন দেখিয়ে অনৈতিক কার্যকালাপ করে আসছিলো।
এরই ধারবাহিকতায় কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল ইউনিয়নের প্যাস্তকুড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মন্ডলের মেয়ে ভাবনা খাতুন (১৩) ও একই উপজেলার চর ধোপাকান্দি গ্রামের আব্দুস সালামের মেয়ে সুমাইয়া ইসলাম (১৩)’কে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে কিছুদিন প্রেমের ফাঁদে ফেলে গত শনিবার সকালে বিয়ের পোলভন দেখিয়ে মেয়ে দুটিকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে মেয়েদের পরিবার মেয়ের ব্যবহৃত রেখে যাওয়া ফোনের ফেসবুক মেসেনজারের কথপোকথন অনুযায়ী ছেলের পরিচয় খুঁজে বের করে তাদের নামে কামারখন্দ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
থানায় অভিযোগের বিষয়টি ছেলেদের পরিবার জানতে পেরে ঘটনার তিনদিন পর আসাদুল ইসলামের বাবা আমিনুল ইসলাম দুটি মেয়েকে নিয়ে এসে স্থানীয় সাবেক মেম্বার মজিদ (ডাকাত) এর হাতে তুলে দেয়।
স্থানীয়রা আরো জানান, মঙ্গলবার সকালে আসাদুল ইসলামের বাবা আমিনুল ইসলাম দুটি মেয়কে নিয়ে এসে মজিদ মেম্বারের কাছে রেখে গেলে মেম্বার মেয়ে দুটির কথা শুনে ধর্ষনের শিকার হয়েছে বুঝতে পারলে আইনগত কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ধর্ষক সেই ছেলেদের ধর্ষনের অপরাধ থেকে বাঁচাতে কাজী ডেকে এনে মেয়ের পরিবারের লোকজন ছাড়ায় জোর পূর্বক বাল্য বিয়ে পরিয়ে দেন।
বিষয়টি জানা জানি হলে সাবেক সেই মেম্বার মেয়ের পরিবারকে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে এসে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে একজনকে ৪০হাজার একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে সাদা কাগজে মুসলেকা নিয়ে মেয়ে দুটিকে রাতেই ডির্ভোস দিয়ে পাঠিয়ে দেন।
এ বিষয়ে ৪নং ওর্য়াডের বর্তমান ইউপি সদস্য মোকতেল হোসেন বলেন, আমাকে কেউ বিষয়টি জানাইনি। পড়ে আমি বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে অবগত করি।
আসাদুল ইসলামের বাবা আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পরে আমি ঢাকা থেকে মেয়ে দুটিকে নিয়ে আসি। পড়ে এলাকার মুরব্বী সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ এর হাতে তুলে দেয়। পরে তিনি গ্রামের ৪নং ওর্য়াড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপন সেখ, যুগ্ম সম্পাদক আওয়াল বাবু, ৪নং ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি ডাঃ আরিফ, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য মজনু ও শিয়ালকোল ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা কামালসহ অন্যান্য মুরুব্বী বসে মিমাংশা করে দেয়।
মেয়ের বাবা আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল বলেন, গত কয়দিন আগে আমার মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পর আর বাড়ি ফিরে না আসাই আমি কামারখন্দ থানায় একটি জিডি করি। পরে আমি জানতে পারলাম আমার মেয়েকে আমিনুল ইসলামের ছেলে আসাদুল বিয়ের পোলভন দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছে। পরে আমাকে গত মঙ্গলবার রাতে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ খবর দিয়ে আাসাদুলের বাড়ীতে নিয়ে আসে। পরে এলাকার মুরুব্বীরা বসে আমাকে ৪০হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে কাজী ডেকে এনে ডিভোর্স করে দেয়।
অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ ঘটনার সতত্য স্বীকার করে বলেন, উভয় পক্ষের সিধান্ত মোতাবেক প্রথমে বিবাহ পড়ানো হয় এবং ক্ষতিপূরণ দিয়ে দুইজনকে ডিভোর্স দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কামারখন্দ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রউফ জানান, আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল ও সুমাইয়া ইসলামের বাবা পৃথক দুটি হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ দিয়েছিলো। অভিযোগের কারণে তদন্ত করেছি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল ফোন জানিয়েছে তার মেয়েকে পেয়েছে।
এ বিষয়ে শিয়ালকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেখ সেলিম বলেন, আমাকে এ বিষয়ে কেউ জানাইনি। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। যদি এই ধরণের কোন ঘটনা ঘটে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।